শ্রদ্ধেয় লাল বাহাদুর শাস্ত্রী - A Speech on Lal Bahadur Shastri in Bengali
সুপ্রভাত, সবার প্রতি আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা। আজ আমি আপনাদের সামনে ভারতের দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী, শ্রদ্ধেয় লাল বাহাদুর শাস্ত্রী সম্পর্কে কিছু কথা বলবো।
লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর জীবনের শুরু
লাল বাহাদুর শাস্ত্রী ১৯০৪ সালের ২রা অক্টোবর উত্তর প্রদেশের মুঘলসরাইয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা শারদা প্রসাদ ছিলেন একজন স্কুল শিক্ষক, এবং মা রামদুলারী দেবী। শাস্ত্রী ছোটবেলা থেকেই ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ দেওয়ার জন্য আগ্রহী ছিলেন। বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে মহাত্মা গান্ধীর একটি ভাষণে উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। মহাত্মা গান্ধীর প্রতি তাঁর গভীর শ্রদ্ধা এবং আদর্শ তাঁকে ভারতের মুক্তির সংগ্রামে যুক্ত করেছিল।
স্বাধীনোত্তর ভারতের ভূমিকা
ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর, ১৯৫২ সালে তিনি ভারতের প্রথম মন্ত্রিসভায় রেলওয়ে ও পরিবহন মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৪ সালে জওহরলাল নেহেরুর আকস্মিক মৃত্যুর পর তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন, যদিও তিনি মাত্র ১৮ মাস এই পদে ছিলেন। তাঁর নেতৃত্বের গুণাবলির জন্য তিনি ‘শাস্ত্রী’ উপাধি পান, যার অর্থ "মহান পণ্ডিত"।
"জয় জওয়ান, জয় কিষাণ" - তাঁর কালজয়ী স্লোগান
লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর একটি বিখ্যাত স্লোগান ছিল "জয় জওয়ান, জয় কিষাণ", যা দেশের সেনাবাহিনী এবং কৃষকদের প্রতি তাঁর অগাধ শ্রদ্ধা ও সমর্থন প্রকাশ করে। কৃষকদের উন্নয়ন এবং দেশের খাদ্য সংকট মোকাবিলার জন্য তিনি সবুজ বিপ্লবের (Green Revolution) প্রবর্তন করেন। তিনি সব সময় স্বনির্ভরতা এবং আত্মবিশ্বাসকে দেশের শক্তির মূল ভিত্তি বলে মনে করতেন।
জাতীয় সমস্যার সমাধানে তাঁর অবদান
শাস্ত্রীজী খাদ্য সংকট, দারিদ্র্য, এবং বেকারত্বের মতো গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা সমাধানে বিশেষ অবদান রেখেছিলেন। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে তাঁর নেতৃত্বে ভারত সাহসিকতার সঙ্গে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। তিনি দেশবাসীকে স্বনির্ভর এবং স্বাবলম্বী করে তোলার লক্ষ্যে কাজ করেছিলেন।
লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর আদর্শ
শাস্ত্রীজী তার জীবনে দৃঢ় নৈতিকতা ও মূল্যবোধের অধিকারী ছিলেন। ধৈর্য, সৌজন্য, এবং আত্মনিয়ন্ত্রণ ছিল তাঁর জীবনের মূলমন্ত্র। তিনি বিয়ের সময় পণ প্রথার বিরোধিতা করেছিলেন এবং নিজের পিতার কাছ থেকেও পণ গ্রহণ করেননি। এছাড়াও, তিনি বর্ণবাদের বিরোধিতা করেছিলেন এবং সর্বদা দেশের সকল শ্রেণীর মানুষের জন্য কাজ করে গেছেন।
ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামে তাঁর অবদান
লাল বাহাদুর শাস্ত্রী ১৯২১ সালের অসহযোগ আন্দোলনের সময় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। ১৯৩০ সালে তিনি আলাহাবাদ কংগ্রেস কমিটির সভাপতি হন এবং মহাত্মা গান্ধীর লবণ সত্যাগ্রহ আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। তিনি ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে জনগণকে কর প্রদানের বিরোধিতা করার জন্য দরজায় দরজায় গিয়ে মানুষকে বুঝিয়েছিলেন। তাঁর এই অবদান ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনকে আরও শক্তিশালী করে তুলেছিল।
শেষ জীবনে শাস্ত্রীজীর অবদান ও মৃত্যু
১৯৬৬ সালে লাল বাহাদুর শাস্ত্রী মৃত্যুর পর ভারতের সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান ‘ভারত রত্ন’ পুরস্কারে ভূষিত হন। পাকিস্তানের সাথে তাশখন্দ চুক্তি স্বাক্ষর করার কিছুদিন পর, ১৯৬৬ সালের ১১ই জানুয়ারি তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হন। তাঁর মৃত্যু জাতির জন্য এক বিরাট ক্ষতি ছিল, কিন্তু তাঁর অবদান ভারতীয় ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
ধন্যবাদ!