আমর্ত্য সেনের উপর বক্তৃতা, ভাষণ | Speech on Amartya Sen in Bengali

আমর্ত্য সেনের উপর বক্তৃতা, ভাষণ | Speech on Amartya Sen in Bengali

শুভ সকাল/বিকাল সকলকে,

আমার আজকের বক্তৃতার বিষয় হল একজন বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ, দার্শনিক, এবং সমাজের দরিদ্রতম মানুষের সমস্যা নিয়ে নিবেদিতপ্রাণ একজন চিন্তাবিদ, আমর্ত্য সেন। তিনি শুধু একজন অর্থনীতিবিদই নন, তিনি এমন একজন ব্যক্তি যিনি সমাজের আর্থ-সামাজিক সমস্যাগুলোর গভীরে প্রবেশ করে বাস্তবিক সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। তাঁর জীবন এবং কর্ম আমাদের সকলের জন্য একটি মহান অনুপ্রেরণা।

Speech on Amartya Sen in Bengali

আমর্ত্য সেনের প্রারম্ভিক জীবন (Early Life of Amartya Sen)

আমর্ত্য সেনের জন্ম হয়েছিল ১৯৩৩ সালের ৩রা নভেম্বর, ভারতের শান্তিনিকেতনে। ছোট থেকেই জ্ঞানার্জনের প্রতি তাঁর এক তীব্র আকর্ষণ ছিল। তিনি তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা শান্তিনিকেতনে সম্পন্ন করেন এবং পরে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়াশোনা করেন। এরপর তিনি উচ্চশিক্ষার জন্য ইংল্যান্ডের ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে যান এবং সেখান থেকে অর্থনীতি বিষয়ে বিএ, এমএ এবং পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।

অর্থনীতি ও কল্যাণবাদে অবদান (Contributions to Economics and Welfare)

আমর্ত্য সেনের সবচেয়ে পরিচিত কাজ হলো দারিদ্র্য, অনাহার, এবং সামাজিক উন্নয়নের বিষয়ে তাঁর গভীর গবেষণা। তিনি ১৯৯৮ সালে অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন কল্যাণ অর্থনীতি (Welfare Economics) এবং সামাজিক নির্বাচন তত্ত্বে (Social Choice Theory) তাঁর অসামান্য অবদানের জন্য। তাঁর লেখা ‘Poverty and Famines: An Essay on Entitlement and Deprivation’ গ্রন্থে তিনি দেখিয়েছেন যে অনেক ক্ষেত্রে অনাহারের কারণ খাদ্যের অভাব নয় বরং খাদ্য বিতরণ ব্যবস্থার ব্যর্থতা।

বঙ্গের মন্বন্তর এবং তাঁর চিন্তা (Bengal Famine and His Thought Process)

আমর্ত্য সেনের অনাহার বিষয়ে আগ্রহ তাঁর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে এসেছে। ১৯৪৩ সালে তিনি মাত্র ৯ বছর বয়সে বঙ্গের মন্বন্তর দেখেছিলেন, যেখানে প্রায় ৩০ লাখ মানুষ অনাহারে মারা যায়। সেই ভয়াবহ ঘটনাটি তাঁর মনে গভীর প্রভাব ফেলেছিল এবং পরবর্তীতে তিনি এ বিষয়ে গবেষণা শুরু করেন। তাঁর মতে, সেই সময় ভারতে পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ ছিল, কিন্তু সঠিক বিতরণের অভাবে মানুষ অনাহারে মারা যায়।

দারিদ্র্যের পরিমাপ এবং নারী-পুরুষের অনুপাতের বৈষম্য (Measuring Poverty and Gender Inequality)

আমর্ত্য সেন দারিদ্র্য নিরূপণে নতুন একটি পদ্ধতি প্রবর্তন করেন, যা উন্নয়নশীল দেশগুলির জন্য বিশেষভাবে কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। তাঁর তাত্ত্বিক কাজগুলো নারী-পুরুষের অনুপাতের বৈষম্যের কারণগুলো ব্যাখ্যা করতে সাহায্য করেছে। তিনি দেখিয়েছেন যে অনেক দরিদ্র দেশে নারীদের তুলনায় পুরুষের সংখ্যা বেশি, যদিও স্বাভাবিক অবস্থায় নারীদের সংখ্যা পুরুষের তুলনায় বেশি হওয়া উচিত। এর প্রধান কারণ হল এইসব দেশে নারীদের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা এবং শৈশবকালীন সুযোগের অভাব।

রাজনৈতিক স্বাধীনতা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন (Political Freedom and Economic Development)

আমর্ত্য সেন রাজনৈতিক স্বাধীনতার পক্ষেও ছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে যেখানে প্রকৃত গণতন্ত্র বিদ্যমান, সেখানে অনাহার বা মন্বন্তরের ঘটনা ঘটে না, কারণ নেতারা জনগণের দাবির প্রতি বেশি সংবেদনশীল থাকেন। তিনি যুক্তি দিয়েছিলেন যে, অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য সামাজিক সংস্কার যেমন শিক্ষা, স্বাস্থ্য পরিষেবা ইত্যাদির উন্নতি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

সাহিত্য ও অন্যান্য অবদান (Literary Contributions and Other Works)

আমর্ত্য সেন শুধু একজন অর্থনীতিবিদই নন, তিনি একজন সৃজনশীল লেখকও। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘Development as Freedom’, ‘Rationality and Freedom’, এবং ‘The Argumentative Indian’। এই গ্রন্থগুলোতে তিনি সমাজের বিভিন্ন সমস্যার গভীরে প্রবেশ করে মানুষের স্বাধীনতা, যুক্তিবাদিতা এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের উপর আলোকপাত করেছেন।

উপসংহার (Speech on Amartya Sen in Bengali)

আমর্ত্য সেন একজন অনন্য প্রতিভা, যিনি তাঁর জীবনকে সমাজের দরিদ্র এবং অসহায় মানুষদের জন্য নিবেদন করেছেন। তাঁর তত্ত্ব এবং চিন্তাধারা শুধু অর্থনীতির জগতে নয়, সমাজের প্রতিটি স্তরে প্রভাব ফেলেছে। আমর্ত্য সেন আমাদের দেখিয়েছেন যে অর্থনৈতিক উন্নয়ন তখনই সম্ভব, যখন সমাজের প্রতিটি মানুষের জন্য সমান সুযোগ এবং অধিকার নিশ্চিত করা হয়।

ধন্যবাদ।

এই বক্তৃতার মাধ্যমে আমি আশা করি, আপনারা আমর্ত্য সেনের জীবন ও কর্ম সম্পর্কে কিছুটা জানতে পেরেছেন এবং তাঁর চিন্তাধারা আপনাদের অনুপ্রেরণা দেবে।

আরও পড়ুন

Please validate the captcha.

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন