সুপ্রভাত সবাইকে! আজ আমি গর্বের সঙ্গে মহাত্মা গান্ধী সম্পর্কে কিছু কথা বলতে চাই। তিনি আমাদের জাতির পিতা এবং একজন মহান নেতার প্রতীক, যিনি তার অসীম ধৈর্য এবং অহিংসার মাধ্যমে ভারতকে স্বাধীনতা উপহার দিয়েছেন।
মহাত্মা গান্ধীর প্রাথমিক জীবন | Early Life of Mahatma Gandhi
মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী, ২ অক্টোবর ১৮৬৯ সালে গুজরাটের পোরবন্দরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা করমচাঁদ গান্ধী ছিলেন পোরবন্দরের প্রধান মন্ত্রী এবং তার মাতা ছিলেন পুতলিবাই। একটি ধর্মপ্রাণ পরিবারের মধ্যে বড় হওয়ার ফলে তিনি ছোটবেলা থেকেই আত্মশৃঙ্খলা এবং অহিংসার পাঠ শিখেছিলেন। তার মায়ের কাছ থেকে শেখা এই মূল্যবোধগুলি তাকে সারাজীবন পথপ্রদর্শন করেছে।
লন্ডনে আইন পড়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকা গমন | Studying Law in London and Journey to South Africa
১৯ বছর বয়সে গান্ধীজী লন্ডনে গিয়ে আইন পড়েন এবং পরে বোম্বেতে (বর্তমানে মুম্বাই) আদালতে আইনজীবী হিসেবে কাজ শুরু করেন। এরপর তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার এক ভারতীয় কোম্পানির প্রতিনিধিত্ব করতে সেখানে যান, যেখানে তিনি এবং তার পরিবার প্রায় ২০ বছর ধরে বসবাস করেন।
অহিংসার শুরু | The Beginning of Nonviolence
দক্ষিণ আফ্রিকায় থাকাকালীন, গান্ধীজী বর্ণবৈষম্যের শিকার হন। একবার, ট্রেনে ভ্রমণ করার সময়, একজন শ্বেতাঙ্গ কন্ডাক্টর তাকে প্রথম শ্রেণীর আসন থেকে তুলে দিয়ে মারধর করে। এই ঘটনার পর গান্ধীজী বুঝতে পারেন যে, শুধু তিনি নন, আরও অনেক ভারতীয়ও এই ধরনের বৈষম্যের শিকার। তখনই তিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করার সিদ্ধান্ত নেন।
সত্যাগ্রহ আন্দোলন | The Satyagraha Movement
গান্ধীজী বিশ্বাস করতেন যে, সহিংসতার পরিবর্তে শান্তিপূর্ণ প্রতিরোধই অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সঠিক পথ। তিনি 'সত্যাগ্রহ' নামে একটি আন্দোলন শুরু করেন, যার মূল উদ্দেশ্য ছিল সত্যের জন্য স্থির থাকা। অহিংসার মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনের জন্য তার এই পদ্ধতি সমগ্র বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছিল।
ভারতে প্রত্যাবর্তন এবং স্বাধীনতা সংগ্রাম | Return to India and the Freedom Struggle
১৯১৪ সালে গান্ধীজী ভারত ফিরে আসেন এবং ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে শুরু করেন। ১৯১৯ সালে ব্রিটিশ সরকারের 'রাওলাট আইন' এর বিরুদ্ধে তিনি একটি সংঘটিত অহিংস প্রতিরোধ আন্দোলন শুরু করেন।
ভারতের স্বাধীনতা এবং গান্ধীজীর অবদান | India's Independence and Gandhi's Contribution
বহু অহিংস আন্দোলন ও প্রচেষ্টার পর, অবশেষে ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীনতা লাভ করে। যদিও দেশটি তখন ভারত এবং পাকিস্তানে বিভক্ত হয়েছিল, গান্ধীজী বিশ্বাস করতেন যে এই বিভাজন হিন্দু এবং মুসলমানদের মধ্যে শান্তি আনতে পারে। তার জীবনভর অবদান তাকে জাতির পিতার মর্যাদায় অভিষিক্ত করেছে।
গান্ধীজীর মৃত্যু | The Death of Gandhi
৩০ জানুয়ারি, ১৯৪৮ সালে, এক সন্ধ্যায় প্রার্থনার পর, গান্ধীজীকে নাথুরাম গডসে নামে এক উগ্রবাদী গুলি করে হত্যা করে। গান্ধীজী দেশ বিভাজনের বিরোধী ছিলেন এবং তিনি সর্বদা জাতিগত শান্তির জন্য চেষ্টা করেছিলেন।
উপসংহার | Speech on Mahatma Gandhi in Bengali
মহাত্মা গান্ধীর জীবন থেকে অনেক কিছু শেখা যায়। তার অহিংসার নীতি, আত্মশৃঙ্খলা এবং সত্যের প্রতি দৃঢ়তা আমাদের জীবনেও প্রযোজ্য হতে পারে। আজও যদি আমরা তার আদর্শ মেনে চলি, তবে সমাজে শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখা সম্ভব। তাই আমাদের উচিত তাকে সঠিকভাবে সম্মান জানানো এবং ধর্মের নামে সহিংসতা বন্ধ করা।
এই ভাষণের মাধ্যমে আমি বলতে চাই যে, আমাদের সবার উচিত ভারতের প্রথম এবং প্রধান পরিচয় হিসেবে একে অপরকে সম্মান করা এবং গান্ধীজীর আদর্শকে জীবনে প্রয়োগ করা।
জয় হিন্দ!