রামমোহন রায়ের উপর বক্তৃতা | Speech on Ram Mohan Roy in Bengali

রামমোহন রায়ের উপর বক্তৃতা | Speech on Ram Mohan Roy in Bengali

সুপ্রভাত! মাননীয় প্রধান অতিথি, শিক্ষকগণ এবং আমার প্রিয় সহপাঠীরা, আজ আমি এক মহামানব, সমাজ সংস্কারক এবং আমাদের জাতির ইতিহাসে অগ্রণী ব্যক্তিত্ব, রামমোহন রায় সম্পর্কে কিছু কথা বলতে চাই। রামমোহন রায়কে আমরা "আধুনিক ভারতের জনক" হিসাবে গণ্য করি। তাঁর সমাজ সংস্কারের কাজ এবং শুদ্ধিকরণ আন্দোলন আমাদের আজও পথ দেখায়। আজকের এই বক্তৃতার মাধ্যমে আমি তাঁর জীবন ও কীর্তির সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরব।
Speech on Raja Ram Mohan Roy in Bengali

রামমোহন রায়ের প্রারম্ভিক জীবন (Early Life of Ram Mohan Roy)

রামমোহন রায় ১৭৭২ সালের ২২ মে, ব্রিটিশ শাসিত বাংলার রাধানগর গ্রামে এক ধনী ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর প্রাথমিক জীবন সম্পর্কে খুব কমই জানা যায়, তবে তিনি অল্প বয়সেই বেশ কয়েকটি ভাষায় দক্ষতা অর্জন করেছিলেন, যার মধ্যে রয়েছে সংস্কৃত, ফার্সি, আরবি, বাংলা, হিন্দি এবং ইংরেজি। ছোটবেলায় তাঁর মধ্যে ধর্মীয় চিন্তায় অস্বাভাবিকতা দেখা গিয়েছিল এবং তিনি বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ পড়ে নিজের মননে প্রশ্ন তুলেছিলেন।

ধর্মীয় সংস্কার এবং ব্রাহ্মসমাজ (Religious Reform and Brahmo Samaj)

রামমোহন রায়ের অন্যতম বৃহৎ অবদান ছিল হিন্দু ধর্মের সংস্কারে। তিনি হিন্দু ধর্মের মধ্যে বিভিন্ন কুসংস্কার ও ধর্মীয় বিভেদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন। ১৮১৫ সালে তিনি আত্মীয় সভা প্রতিষ্ঠা করেন, যার মাধ্যমে তিনি একেশ্বরবাদ প্রচার করতে শুরু করেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে সকল ধর্মের মূল ভিত্তি এক এবং সেই একমাত্র ঈশ্বরকে কেন্দ্র করেই সকল ধর্মের সূচনা। তিনি বেদ এবং উপনিষদ-এর উপর ভিত্তি করে তাঁর একেশ্বরবাদী মতবাদ প্রতিষ্ঠা করেন।

পরবর্তীতে, ১৮২৮ সালে, তিনি ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠা করেন, যা হিন্দু ধর্মের শুদ্ধি এবং একেশ্বরবাদ প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ব্রাহ্মসমাজ ছিল হিন্দু ধর্মের প্রথাগত আচার-অনুষ্ঠান থেকে বেরিয়ে এসে এক নতুন ধারার সূচনা।

সমাজ সংস্কারে অগ্রণী ভূমিকা (Pioneering Role in Social Reform)

রামমোহন রায় ছিলেন একজন শক্তিশালী সমাজ সংস্কারক। তিনি কেবল ধর্মীয় ক্ষেত্রেই নয়, সামাজিক ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে ছিলেন এবং এর সম্পূর্ণ নিষিদ্ধকরণের জন্য আন্দোলন চালিয়েছিলেন। ১৮২৯ সালে তাঁর লেখালেখি এবং আন্দোলনের ফলে ব্রিটিশ সরকার সতীদাহ প্রথা নিষিদ্ধ করে।

তিনি জাতিভেদ প্রথার বিরুদ্ধেও সোচ্চার ছিলেন এবং জাতিগত সমতা ও মানবাধিকারের পক্ষে জোরালো অবস্থান নেন।

শিক্ষাক্ষেত্রে অবদান (Contribution to Education)

রামমোহন রায় শিক্ষার ক্ষেত্রেও অনেক অবদান রেখেছেন। ১৮২২ সালে তিনি অ্যাংলো-হিন্দু স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন এবং ১৮২৬ সালে বেদান্ত কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে ভারতীয় শিক্ষাব্যবস্থায় পাশ্চাত্য শিক্ষার সংমিশ্রণ প্রয়োজন এবং তিনি এই লক্ষ্যে কাজ করেন। তাঁর মতে, শুধু প্রাচীন সংস্কৃত শিক্ষাই যথেষ্ট নয়, বরং আধুনিক শিক্ষার মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মকে প্রস্তুত করতে হবে। তিনি বিজ্ঞান, গণিত এবং ইংরেজি শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন ছিলেন।

রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড (Political Activism)

রামমোহন রায়ের রাজনৈতিক চিন্তাধারাও ততটাই আধুনিক ছিল। ১৮২৩ সালে ব্রিটিশ সরকার যখন কলকাতার সংবাদপত্রের উপর সেন্সরশিপ আরোপ করে, তিনি এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানান। তিনি গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং ধর্মীয় স্বাধীনতার পক্ষে কথা বলেন। তাঁর সংবাদপত্রের মাধ্যমে তিনি সমাজের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান ও সচেতনতার জন্য কাজ করেছেন।

তিনি ইংল্যান্ডেও রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় ছিলেন এবং ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ১৮৩৩ সালে ব্রিস্টলে তাঁর মৃত্যু হয়, তবে তাঁর কাজ এবং চিন্তাভাবনা আজও আমাদের অনুপ্রেরণা দেয়।

উপসংহার (Speech on Raja Ram Mohan Roy in Bengali)

রামমোহন রায় ছিলেন এক অনন্য ব্যাক্তিত্ব, যিনি ধর্ম, সমাজ এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রভূত অবদান রেখেছেন। তাঁর চিন্তাধারা, সংগ্রাম এবং সমাজ সংস্কারের প্রচেষ্টার জন্য আমরা আজ তাঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। তিনি শুধু ভারতের নয়, সমগ্র বিশ্বের একজন প্রভাবশালী ব্যাক্তিত্ব হিসেবে বিবেচিত হন। তাঁর জীবন থেকে আমরা শিখতে পারি যে, প্রকৃত পরিবর্তন আনার জন্য সাহস এবং জ্ঞান দুটিই প্রয়োজন।

ধন্যবাদ!

আরও পড়ুন

Please validate the captcha.

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন