রবী শঙ্কর সম্পর্কে বক্তব্য | Speech on Pandit Ravi Shankar in Bengali

রবী শঙ্কর সম্পর্কে বক্তব্য | Speech on pandit Ravi Shankar in Bengali

সুপ্রভাত সম্মানিত শিক্ষক, অতিথি এবং আমার সহপাঠীরা। আজ আমি আপনাদের সামনে উপস্থিত হয়েছি আমাদের দেশের একজন গর্বিত সঙ্গীত ব্যক্তিত্ব রবী শঙ্কর সম্পর্কে কিছু কথা বলার জন্য। তিনি শুধুমাত্র একজন ভারতীয় সঙ্গীতজ্ঞই নন, বরং তাঁর সংগীত দক্ষতার মাধ্যমে ভারতীয় সঙ্গীতকে বিশ্বের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য অবিস্মরণীয় ভূমিকা পালন করেছেন।

Speech on Ravi Shankar in Bengali

প্রারম্ভিক জীবন এবং শিক্ষা

রবী শঙ্করের জন্ম ৭ই এপ্রিল, ১৯২০ সালে ভারতের বেনারসে (বর্তমান বারাণসী) এক ব্রাহ্মণ পরিবারে হয়। তাঁর পুরো নাম ছিল রবীন্দ্র শঙ্কর চৌধুরী। ছোটবেলা থেকেই তিনি তাঁর বড় ভাই উদয় শঙ্করের সাথে সঙ্গীত ও নৃত্যের সংস্পর্শে আসেন। প্রথমদিকে তিনি নৃত্যশিল্পী হিসেবে ইউরোপ এবং ভারতের বিভিন্ন স্থানে সফর করেন। তবে ১৮ বছর বয়সে নৃত্যকে বিদায় জানিয়ে সঙ্গীতের দিকে পুরোপুরি মনোযোগ দেন এবং শুরু করেন সেতার শেখা। পরবর্তী সাত বছর তিনি বিখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ উস্তাদ আলাউদ্দিন খানের কাছে সেতার শেখেন এবং তার সঙ্গীত জীবনের ভিত্তি গড়ে তোলেন।

অল ইন্ডিয়া রেডিও এবং সঙ্গীত পরিচালনা

১৯৪৮ থেকে ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত তিনি অল ইন্ডিয়া রেডিওতে সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে কাজ করেন। এখান থেকেই তিনি ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের প্রতি বিশ্বব্যাপী মানুষের আগ্রহ বাড়াতে শুরু করেন। রেডিওতে কাজ করার সময় তিনি বিভিন্ন ধরনের ভারতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন এবং তাঁর সুরের মাধ্যমে সঙ্গীতকে নতুন মাত্রায় উন্নীত করেন।

আন্তর্জাতিক পর্যায়ে রবী শঙ্করের ভূমিকা

১৯৬০-এর দশক থেকে রবী শঙ্কর ভারতীয় সঙ্গীতকে বিশ্ববাসীর কাছে পরিচিত করতে ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন দেশে সফর করেন। আমেরিকান বায়োলিন শিল্পী ইয়েহুদি মেনুহিনের সাথে তাঁর সুরের মেলবন্ধন এবং বিটলসের জর্জ হ্যারিসনের সাথে তাঁর ঘনিষ্ঠতা ভারতের সঙ্গীতকে পশ্চিমা শ্রোতাদের কাছে পৌঁছে দেয়। তাঁর সুরের মূর্ছনা তৎকালীন জ্যাজ স্যাক্সোফোনিস্ট জন কোলট্রেন ও বিখ্যাত সুরকার ফিলিপ গ্লাসকেও গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল।

“রাগ মালা” এবং অন্যান্য বিখ্যাত রচনা

রবী শঙ্করের অনন্য সৃষ্টি “রাগ মালা” তাঁকে আন্তর্জাতিক খ্যাতি এনে দেয়। এটি সেতার ও অর্কেস্ট্রার সংমিশ্রণে তৈরি এক অনন্য সংগীত, যা ১৯৮১ সালে প্রথমবার পরিবেশন করা হয়। এই রাগের বৈচিত্র্যের মাধ্যমে তিনি ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের ঐশ্বর্য এবং গভীরতা বিশ্বের কাছে তুলে ধরেন।

পুরস্কার ও সম্মাননা

রবী শঙ্করের সঙ্গীত জীবনে বিভিন্ন পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হন। তিনি চারবার গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড জিতেছেন—“ওয়েস্ট মিটস ইস্ট” (১৯৬৬), “দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ” (১৯৭১), “ফুল সার্কেল” (২০০১) এবং মৃত্যুর পর “দ্য লিভিং রুম সেশনস পার্ট ১” (২০১২)। এছাড়াও তিনি ১৯৯৭ সালে জাপান আর্ট অ্যাসোসিয়েশনের প্রাইমিয়াম ইম্পেরিয়েল পুরস্কার লাভ করেন।

পরিবারের সঙ্গে সঙ্গীত জীবনের সংযোগ

রবী শঙ্করের কন্যা অনুষ্কা শঙ্কর তাঁর বাবার মতো সেতার বাদক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন এবং বাবার সঙ্গীতে ভারতীয় ও পশ্চিমা সুরের মেলবন্ধন তুলে ধরেছেন। এছাড়া তাঁর আরেক কন্যা, নোরা জোনস, যিনি একজন বিখ্যাত গ্র্যামি-জয়ী গায়িকা, তাঁর গানে জ্যাজ, পপ এবং কান্ট্রির সংমিশ্রণ নিয়ে এসেছে।

সমাপ্তি | Speech on Ravi Shankar in Bengali

রবী শঙ্করের অবদান শুধু ভারতীয় সঙ্গীতের গণ্ডিতেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং তিনি সঙ্গীতকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। তাঁর জীবনের প্রতিটি অধ্যায় আমাদের শিক্ষা দেয় কিভাবে একাগ্রতা, সাধনা এবং মেধা দিয়ে বিশ্বজয় করা সম্ভব। সঙ্গীতপ্রেমীদের জন্য তাঁর জীবন এক অনুপ্রেরণার উৎস এবং তাঁর সংগীতের সুর আমাদের হৃদয়ে চিরকাল বেজে উঠবে। ধন্যবাদ, আশা করি রবী শঙ্করের জীবনের গল্প আপনাদের ভালো লেগেছে এবং এই মহান সঙ্গীতজ্ঞ সম্পর্কে আরও জানার আগ্রহ জাগিয়েছে।

আরও পড়ুন

Please validate the captcha.

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন